ইউনির্ভাসাল মাস্ক এয়ার সাপ্লায়ার তৈরী করে তাক লাগালো খুদে আবিস্কারক

24th June 2021 8:21 pm বর্ধমান
ইউনির্ভাসাল মাস্ক এয়ার সাপ্লায়ার তৈরী করে তাক লাগালো খুদে আবিস্কারক


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) :  ’কোভিড’ আক্রান্তদের প্রাণে বাচানোর জন্যে  জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিন রাত এক করে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। কোভিড  যুদ্ধে নিজে সামিল হতে না পারলেও ’প্রথম সারির ’ সেইসব কোভিড যোদ্ধাদের জন্য বিশেষ কিছু একটা করার ব্যাপারে  মনস্থির করে বসে  দ্বাদশ শ্রেনীর ছাত্র দেবর্ষি দে। সেই অনুযায়ী  নিজের বিজ্ঞান ভাবনা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেবর্ষি  তৈরি করে ফেলেছে “ইউনিভার্সাল মাস্ক এয়ার সাপ্লায়ার“।পিপিই কিট পরিহিত প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাদের মুখে থাকা তাঁর তৈরি ’মাস্ক’ ’ফ্রেশ অক্সিজেন’ সরবরাহ করবে । পাশাপাশি শ্বাস কষ্টের রোগীরা ’নেবুলাইজেশনের’ সহায়তাও তাঁর আবিস্কৃত মাস্কের মাধ্যমে পাবেন বলে  ছাত্র দেবর্ষি দাবি করেছে।খুব শুঘ্রই কোভিড সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা ।তার প্রাক্কালে এক খুদে বিজ্ঞানির তৈরি সামান্য মূল্যের এমন ’অভিনব মাস্ক’ প্রশাসন ও চিকিৎসক মহলে সাড়া ফেলে দিয়েছে। মেধাবী ছাত্র দেবর্ষি দে-র বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার প্রত্যন্ত গ্রাম বেত্রাগড়ে । সে জামালপুরের সেলিমাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের
 দ্বাদশ শ্রেনীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। দেবর্ষি জানিয়েছে,  দুই ধরণের ‘ইউনিভার্সাল ’মাস্ক এয়ার সাপ্লায়ার’ সে তৈরি করেছে ।তার মধ্যে একটি প্রথম সারির কোভিড যোদ্ধা অর্থাৎ ডাক্তার ও নার্সদের ব্যবহারের জন্যে । অপরটি সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্যে । দেবর্ষি আরও জানিয়েছে,“দুটি ’মাস্ক এয়ার সাপ্লায়ার সে একই প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে। তবে ডাক্তার ও নার্সদের জন্যে তাঁর তৈরি ’মাস্ক এয়ার সাপ্লায়ারটি’ উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ।সেই কারনে সাধারণ মানুদের ব্যবহারের জন্যে তাঁর তৈরিকরা ’মাস্ক এয়ার সাপ্লায়ারটি’ আকারে একটু ছোট ।আর ডাক্তার ও নার্সদের জন্যে তৈরি মাস্ক এয়ার সাপ্লায়ারটি আকারে একটু বড়। মুলত ১২ ভোল্ট ডিসি রি-চার্যেবল লিথিয়াম- আয়ন  ব্যাটারি,বাজার থেকে কেনা একটি ’টিপি ৪০৫৬’ এবং একটি  ’এক্স এল ৬০০৯’ সার্কিট বোর্ড এবং নিজের তৈরি করা আপর একটি  সার্কিট বোর্ড ’ইউনিভার্সাল মাস্ক এয়ার সাপ্লায়ার’ এর ভিভাইস টিতে রয়েছে বলে দেবর্ষি জানিয়েছে’ ।  নিজের তৈরি করা ডিভাইসের ব্যখ্যা দিতে গিয়ে দেবর্ষি জানিয়েছে ,সাধারণ মানুষের জন্য তৈরি করা তাঁর ’মাস্ক এয়ার সাপ্লায়ার এর ডিভাইসটিতে ২ টি ’এয়ার  সাকার’ রয়েছে । আর ডাক্তার ও নার্সদের ব্যবহারের জন্যে তৈরি করা ডিভাইসটিতে রয়েছে ৫ টি ’এয়ার সাকার’ । প্রতিটি ’এয়ার সাকারের’ মধ্যে রয়েছে ৬ টি ০.১-০.৩ মাইক্রোনের ফিল্টার । যা বাতাসকে ১০০ শতাংশ বিষুদ্ধ করে পাইপ লাইনের মধ্যমে মাস্কের ভিতরে পাঠিয়ে দেয় । ছোট ডিভাইস টিতে থাকা সুইচ দ্বারাই ডিভাইসটি কন্ট্রোল করা যাবে । আর বড় ডিভাইসটি তার (wire) দ্বারা যুক্ত রিমোটের মাধ্যমে কন্ট্রোল করতে হয়।ছোট ডিভাইসটির ওজন ২০২ গ্রাম আর বড় ডিভাইসটির ওজন ৪০৫ গ্রাম ।যা সহজেই ব্যবহার যোগ্য ।সরু পাইপের ইনপুট লাইন ডিভাইসের সঙ্গে যুক্ত থাকবে আর আউটপুট পাইপ লাইন মাস্কের সঙ্গে যুক্ত থাকবে।এছাড়াও নিমুলাইজার ব্যবহারের ক্ষেত্রে ১৫ এমএল এর নিমুলাইজার চেম্বারটি ’ইনপুট’ পাইপ লাইন ডিভাইসের সাথে এবং চেম্বারের ’আউটপুট’ পাইপ লাইনটি মাস্কের সাথে যুক্ত করতে হবে । শ্বাস কষ্টের রোগীরা এক্ষেত্রে উপকার পাবেন। ’ডাক্তার ও নার্সদের ব্যবহারের জন্য তৈরি করা বড় ডিভাইসের ’ইউনিভার্সাল মাস্ক এয়ার সাপ্লায়ারটি’ তৈরি করতে সর্বোচ্চ  ৫০০ টাকা ।আর একই প্রযুক্তিতে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্যে তৈরি করা ছোট ডিভাইসের মাস্ক এয়ার সাপ্লায়ারটি  তৈরী করতে সর্বোচ্চ ৩০০- ৩৫০ টাকা খরচ পড়েছে বলে খুদে বিজ্ঞানি দেবর্ষি  দাবি করেছে’ ।  

দেবর্ষির বাবা ব্রজেন দে হাওড়ার লিলুয়ার এমসিকেবি ইনস্টিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কেমিস্ট্রির প্রফেসার। মা হীরা দে সাধারণ গৃহবধূ।দেবর্ষির দিদি দেবর্পিতা কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে এমসিকেবি ইনস্টিটিউটে তৃতীয় বর্ষে পাঠরত।ব্রজেন বাবু ও হীরাদেবী বৃহস্পতিবার বলেন,’ছোট বয়স থেকেই বিজ্ঞান ভিত্তিক কারিগরি বিষয় নিয়ে দেবর্ষির আগ্রহ আগ্রহ বাড়তে শুরু করে। ইলেকট্রনিক্স খেলনা বা অন্য যা কিছু সে হাতের কাছে পেত তার সবটা খুলে ভিতরে কিকি পার্টস আছে , সেই পার্টস গুলি কি ভাবে কাজ করছে তা বোঝার চেষ্টা করতো দেবর্ষি। এইসব ছাড়াও ফেলে দেওয়া ইলেকট্রনিক্সের সরঞ্জাম থেকে নতুন কিছু তৈরি করা যায় কিনা তারও প্রচেষ্টা ছেলে দেবর্ষি চালাতো ।ব্রজেন বাবু বলেন , এখন স্কুল বন্ধ রয়েছে। বাড়িতে বসেই নিজের বিজ্ঞান ভাবনা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাছে লাগিয়ে তাঁর ছেলে দেবর্ষি প্রথম সারির করোনা যোদ্ধা ডাক্তার ও নার্স এবং একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের জন্যে ’ইউনিভার্সাল মাস্ক এয়ার সাপ্লায়ার’ তৈরি করে ফেলেছে জেনে তিনি গর্বিত বোধ করছেন ।দেশ ও দেশের মানুষের কল্যানে লাগবে এমন আরও অনেক কিছু দেবর্ষি আবিস্কার করুক এমটাই  ইচ্ছার কথা মা হীরাদেবী শুনিয়েছেন।  জামালপুর ব্লক  হাসপাতালের বিএমওএইচ চিকিৎসক ঋত্বিক ঘোষ জানিয়েছেন ,পিপিই কিট পরিহিত হয়ে কাজ করা ডাক্তার ও নার্সদের  ক্ষেত্রে দেবর্ষির আবিস্কৃত ’মাস্ক’ সহায়ক হতে পারে বলেই তাঁর মনে হয়েছে ।  অন্যদিকে ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার  জানিয়েছেন, “দেবর্ষির আবিস্কৃত ’মাস্কটি’ অভূতপূর্ব লাগায় তিনি বিষয়টি সন্মন্ধে বিএমওএইচ কে জানান । এমন ’মাস্ক’ প্রথম সারির কোভিড যোদ্ধারের কাজের ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা নেবে বলেই তাঁর মনে হয়েছে।  সার্টিফিকেশনের জন্যে বিএমওএইচ  মাস্কের বিষয়টি নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সার্টিফিকেশন পাওয়া গেলে সরকারী ভাবে দেবর্ষির আবিস্কৃত ’মাস্ক’ ব্যবহার করা যাবে বলে বিডিও জানিয়েছেন“ । 
 

 





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।